Header Ads Widget


Ticker

4/News/ticker-posts

রসায়ন

 

পরিভ্রমণে ঝাঁপ দিনঅনুসন্ধানে ঝাঁপ দিন
ফ্লাস্কে বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান
রসায়ন পদার্থের নিজেদের মধ্যে এবং শক্তির সাথে পারস্পরিক ক্রিয়া সম্পর্কে আলোচনা করে।

রসায়ন পদার্থের উপাদান, কাঠামো, ধর্ম ও পারস্পরিক ক্রিয়া-বিক্রিয়া সংক্রান্ত বিজ্ঞান। রসায়নবিদেরা মনে করেন বিশ্বের যাবতীয় বস্তু পরমাণু দিয়ে গঠিত। দুই বা ততোধিক পরমাণু রাসায়নিক বন্ধন দ্বারা আবদ্ধ হয়ে অণুর সৃষ্টি করে। এক বা একাধিক ইলেকট্রন পরমাণু বা অণু থেকে সরিয়ে নিলে বা যোগ করলে আধানযুক্ত কণা তথা আয়ন সৃষ্টি হয়। ধনাত্মক আয়ন ও ঋণাত্মক আয়নের সংযোগে সৃষ্টি হয় আধান-নিরপেক্ষ লবণ(মূলত এটি ক্লোরিন বা সালফেটের যৌগ)। রসায়নবিদেরা আণবিক ও পারমাণবিক স্তরে পদার্থ সম্পর্কে তাদের জ্ঞান দিয়ে কীভাবে বিভিন্ন ধরনের পদার্থ একে অপরের সাথে ক্রিয়া করে এবং এগুলি কীভাবে বিভিন্ন অবস্থায় রূপান্তরিত হয়, তা ব্যাখ্যা করতে পারেন। রসায়নবিদেরা পদার্থের পরিবর্তন সাধন করতে পারেন ও নতুন নতুন যৌগ সৃষ্টি করতে পারেন যাদের মধ্যে আছে ঔষধবিস্ফোরকপ্রসাধনী ও খাদ্য। রাসায়নিক সংশ্লেষণ কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন শিল্পে বিপুল পরিমাণ রাসায়নিক দ্রব্য উৎপাদন করা হয়।

পদার্থের প্রকারভেদ কিংবা গবেষণার সাদৃশ্য বিবেচনা করে রসায়নের বিভিন্ন শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। রসায়নের প্রধান শাখাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো অজৈব রসায়ন অর্থাৎ রসায়নের যে শাখায় অজৈব যৌগ নিয়ে আলোচনা করা হয়, জৈব রসায়ন বা যে শাখায় জৈব যৌগ নিয়ে আলোচনা করা হয়, প্রাণরসায়ন, রসায়নের যে শাখায় জীবদেহের রাসায়নিক পদার্থ নিয়ে আলোচনা করা হয়, ভৌত রসায়ন, এই শাখায় আণবিক পর্যায়ে শক্তির সাথে সম্পর্কযুক্ত রাসায়নিক ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করা হয়, বিশ্লেষণী রসায়ন, এক্ষেত্রে পদার্থের বিশ্লেষণের মাধ্যমে তাদের গঠন, সংযুক্তি ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করা হয়। সাম্প্রতিক কালে রসায়নের আরও অনেক নতুন শাখার উদ্ভব হয়েছে, যেমন- স্নায়ু রসায়নস্নায়ুতন্ত্রের রাসায়নিক গঠন নিয়ে এই শাখায় আলোচনা করা হয়।

তত্ত্ব

ল্যাবরেটরিইন্সটিটিউট অফ বায়োকেমিস্ট্রি, ইউনিভার্সিটি অফ কনজ এই সকল প্রতিষ্ঠানগুলোতে ঐতিহ্যবাহী রসায়ন চর্চা শুরু হয়। এখানে মৌলিক উপাদান, পরমাণুপদার্থগলনক্রিস্টাল ও পদার্থ একত্র করা,কঠিন পদার্থতরলবায়বীয় পদার্থযৌগ তৈরির নীতিকথাবার্তাবিক্রিয়া এবং রূপান্তর ইত্যাদি নিয়ে গবেষণা করা হয়।

ইতিহাস

রসায়নের ইতিহাস একটি অনেক বড় বিষয়।এটি প্রাচীন ও প্রধান বিজ্ঞানগুলোর অন্যতম। বলা চলে আগুন আবিষ্কারের পর থেকেই মানব সভ্যতার হাত ধরে এগিয়ে চলেছে রসায়ন। ভারতবর্ষে প্রায় ৫০০০ বছর পূর্বেই কাপড়কে আকর্ষণীয় করে তুলতে রঙের ব্যবহার শুরু হয়েছিল। রসায়ন 'চর্চায় প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার অবদান অনেক। প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় রসায়ন চর্চা আল-কেমি (Alchemy) নামে পরিচিত। আল-কেমি আরবি আল-কিমিয়া থেকে উদ্ভূত, যা দিয়ে মিশরীয় সভ্যতাকে বুঝানো হতো। জাবির ইবন হাইয়ানকে রসায়ন শাস্ত্রের ও লাভোয়াজিয়েকেকে আধুনিক রসায়ন শাস্ত্রের জনক বলা হয়ে থাকে। মধ্যযুগে ধাতুকে সোনায় পরিণত করতে পারার পদ্ধতি আবিষ্কারের প্রচেষ্টায় শুরু হয় আলকেমি বিদ্যা, যা লাভোয়াজিয়ে, মেন্ডেলিফদের হাতে পূর্ণতা লাভ করেছে।

রসায়ন শব্দের উৎপত্তি

রসায়ন শব্দের ইংরেজি Chemistry (কেমিস্ট্রি)। মধ্যযুগে পরশ পাথরের সন্ধানে পরীক্ষারত মুসলিম বিজ্ঞানীরা একটি শাস্ত্র বা পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। এটাকে তারা বলতেন আলকামিস্তা বা আলকেমি। আলকেমি এসেছে আরবী শব্দ আল-কিমিয়া থেকে। আল-কিমিয়া শব্দটি এসেছে 'কিমি' থেকে। কিমি থেকেই chemistry শব্দের উৎপত্তি। আলকেমি আল অর্থ দি(The), এবং কেমি বাা কিমি অর্থ ব্লাক সয়েল বা কালো মাটি। এই কালো মাটি আসলে মিশরের নীল নদের তীরের মাটি। প্রাচীন মিশরকে রসায়নের জন্মক্ষেত্র বলা যায়। কারণ, মিশরীয়রা সভ্যতার আদি লগ্নে যে মমি তৈরি করতো তাতেই তারা নানান রকমের রাসায়নিক ব্যবহার করতো। প্রাচীন গ্রীসেও রসায়নের চর্চা শুরু হয়েছে সুপ্রাচীনকাল থেকেই।

তারা চিন্তা করতো এ্যালিক্সির বা জীবন সঞ্জিবনীর কিভাবে তৈরি করা যায়! কারণ, মানুষ চিরদিন বেঁচে থাকতে চায় অমর হতে চায়। ভারতীয় উপমহাদেশের ঋষিরাও চাইতেন তেমন কিছু তৈরি করার। তারা একে বলতেন পরশ পাথর!

গ্রিসদের এই চিন্তা ভাবনা ও কাজের সাথে পরিচিত ছিলেন জাবির ইব্নে হাইয়ান। তাঁর পিতা ইবনে হাইয়ানও একজন গুপ্তবিদ্যাচর্চাকারী ছিলেন। প্রাচীনকালে রসায়ন গুপ্ত বিদ্যা বলে পরিচিত ছিলো। কারণ রসায়নবিদরা লোক চক্ষুর অন্তরালে তাদের পরীক্ষা-নীরিক্ষা করতেন। কারণ সাধারণ মানুষের কৌতুুহল বেশি থাকে এবং তারা কাজে বাঁধা সৃষ্টি করতে তৎপর থাকে।

পরবর্তী সময়ে জাবির ইবনে হাইয়ান তাঁর নিজ বাসভূমি আরবীয় অঞ্চলে ফিরে আসেন এবং রসায়ন শাস্ত্রের উপর ১০৮ খানা গ্রন্থ লেখেন। তাঁর এই মহামূল্য গ্রন্থগুলো রসায়ন গবেষণায় সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। তাকে প্রাচীন রসায়নের জনক বলে অভিহিত করা হয়।

Post a Comment

0 Comments